মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
রংপুরে ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড প্রায় ১২ শ ঘর-বাড়ি উদ্দীপনা ও প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের নতুন কমিটির অভিষেক ৪৭,৭১ ও ২৪শের বিপ্লব অর্থবহ করতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার বিকল্প নাই: শ্রীপুরে দুর্নীতিমুক্ত-সন্ত্রাসমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গ্রাম্য বৈঠক অনুষ্ঠিত  ‎তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন শ্রীপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শারদীয় শুভেচ্ছা ও উপহার বিতরণ নওগাঁর পত্নীতলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান নিহত বদলগাছীতে সাংবাদিক আশরাফুল ইসলামের স্মরণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রংপুরে সাংবাদিক হত্যা চেষ্টা মামলার প্রধান আসামী গ্রেফতার নড়াইলে বাস টার্মিনালে অবৈধ টোল আদায় বন্ধে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ

নড়াইলে মধুমতির ভয়াল থাবায় দিশেহারা হাজারো পরিবার

খন্দকার ছদরুজ্জামান, নড়াইল 
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫
  • ৪০ Time View

খন্দকার ছদরুজ্জামান,নড়াইল :

নড়াইলের মধুমতি নদীর ভাঙনে প্রতিনিয়ত বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত বাড়িঘর, ফসলি জমি, স্কুল-মাদ্রাসা, কবরস্থানসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। মাথা গোঁজার শেষ সম্বল হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে হাজারো পরিবার। আর ভাঙনের ঝুঁকিতে নির্ঘুম রাত পার করছেন কয়েক লাখ মানুষ। তবে সীমিত বরাদ্দ দিয়েই ভাঙন রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। লোহাগড়া উপজেলার আমডাঙ্গা গ্রামের খুকি ও আঞ্জুমান আরা’র চোখের সামনে ভিটেমাটি হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে পাগলপ্রায়। তাদের আর্তনাদ মধুমতির নির্মমতাকে আরও স্পষ্ট করে। আমডাঙ্গা গ্রামের আঞ্জুমান আরা কাঁদছেন আর বিলাপ করে বলছেন, ‘স্বামীকে হারিয়ে তিনটা সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটছিল। ভিটেটা চলে গেলো, ছেলে মেয়ে নিয়ে কই যাব?’

শুধু তার নয়, একই গল্প অন্তত ৪৫টি গ্রামের কয়েক লাখ মানুষের। নদীর খরস্রোতে প্রতিনিয়ত গ্রাস হচ্ছে জনপদ,আর মানুষ হারাচ্ছে আশ্রয়। বুক ফাটা আর্তনাদে পাষণ্ডের মন গললেও বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ ক্ষুধার্ত মধুমতি। গত শীত মৌসুম থেকেই শুরু হওয়া মধুমতীর ভাঙন নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে গত দেড় মাস ধরে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মুহূর্তেই বাড়িঘর,জমি, স্কুল-মাদ্রাসা বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে। বিলীন হওয়ার পথে শত বছরের ওপারের অবশিষ্ট নড়াইলের অংশ। শেষ সময়ে ভিটেমাটি হারালেও দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র রক্ষার প্রবল চেষ্টা। তীব্র ভাঙনে অসহায় হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। প্লাবনে নষ্ট হয়েছে কয়েক হাজার একর জমির ফসল।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, মধুমতির তীরবর্তী শিয়েরবর, মন্ডলভাগ, মাকড়াইল, রামকান্তপুর, দক্ষিণ রামকান্তপুর, রামচন্দ্রপুর, আমডাঙ্গা, কাশিপুর, আস্তাইল, ধানাইড়, করগাতি, ইতনা, লংকারচর, ডিগ্রিরচর, তেলকাড়া, মঙ্গলপুরসহ লোহাগড়া উপজেলার ৪৫টি গ্রামে মধুমতির ভাঙন রয়েছে কয়েক দশক ধরে। আর কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর চোখ রাঙানিতে ভাঙন রয়েছে অন্তত ২৫টি গ্রামে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার অতিমাত্রায় নদীর পানি বৃদ্ধিতে তীরবর্তী অঞ্চলগুলোর ভাঙন তীব্র হলেও চলতি বছরে মাত্র ৮ টি পয়েন্টকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত তিন বছরে ভাঙন রোধে জেলা পাউবো  জরুরি আপদকালীন কাজ করেছেন প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার, আর ব্যয় হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে জরুরি আপদকালীন কাজ হয়েছে ২০টি পয়েন্টে। ৩ দশমিক ০৫৪ কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জরুরি আপদকালীন কাজ হয়েছে ১৩টি পয়েন্টে। ১ দশমিক ৪৮৬ কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। তবে ২০২৫-২৬ চলতি অর্থবছরে মাত্র ৮ টি পয়েন্টকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ নির্ধারণ করে কাজ করা হচ্ছে ৬৭৩ মিটারে, আর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৪১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। পাউবো আরও জানায়,  ভাঙন কবলিত জেলায় ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জেলা পাউবো জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ী কাজ করেছে মাত্র ৭৪৫ মিটার, আর ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। তবে ৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১৫৯ কোটি ১ লাখ টাকা। জেলার ভাঙন রোধে প্রায় সাড়ে ১৩ কি.মি. অংশে আনুমানিক ৬৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণে প্রস্তাবনা পাঠায় জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে তিন বছর ধরে নড়াইল বাসীর ভাগ্য ঝুলে আছে ফাইলপত্র আর সমীক্ষা প্রতিবেদনের বেড়া জালে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, ‘নড়াইল একটি নদীভাঙন প্রবণ জেলা। নদী ভাঙন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতি বছরই এ অঞ্চলের মধুমতী ও নবগঙ্গার ভাঙন থেকে বাড়িঘর, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ফসলি জমি রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। চলতি বছরেও ভাঙন কবলিত অতি গুরুত্বপূর্ণ ৮ স্থান নির্ধারণ করে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। আর জেলায় প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটারের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, যেটির প্রক্রিয়া চলমান। সীমিত বরাদ্দ দিয়ে এ অঞ্চলের ভাঙন রোধে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভাঙন রোধে নিজেদের অসহায়ত্বের সরল স্বীকারোক্তি জেলা পাউবোর। তবে সীমিত বরাদ্দ দিয়ে জনপদ আর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টার আশ্বাস জেলার এ কর্মকর্তার। ভাঙন রোধে স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ ও জিও ব্যাগ ফেলা স্বল্প দৈর্ঘ্যের অংশটুকু রক্ষা পেলেও বহাল তবিয়তে নদী তীরবর্তী জনপদ গিলে খাচ্ছে মধুমতি। এ জনপদ রক্ষায় শুধু  জিও ব্যাগে সমাধান না খুঁজে স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধের দাবি স্থানীয়দের।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category