বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
রংপুরে ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড প্রায় ১২ শ ঘর-বাড়ি উদ্দীপনা ও প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের নতুন কমিটির অভিষেক ৪৭,৭১ ও ২৪শের বিপ্লব অর্থবহ করতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার বিকল্প নাই: শ্রীপুরে দুর্নীতিমুক্ত-সন্ত্রাসমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গ্রাম্য বৈঠক অনুষ্ঠিত  ‎তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন শ্রীপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শারদীয় শুভেচ্ছা ও উপহার বিতরণ নওগাঁর পত্নীতলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান নিহত বদলগাছীতে সাংবাদিক আশরাফুল ইসলামের স্মরণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রংপুরে সাংবাদিক হত্যা চেষ্টা মামলার প্রধান আসামী গ্রেফতার নড়াইলে বাস টার্মিনালে অবৈধ টোল আদায় বন্ধে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ

জরাজীর্ণ ঘরে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস, মেঘ দেখলেই দিশেহারা আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা

জাহিদ হাসান, মাদারীপুর
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০২৪
  • ১২৮ Time View
জাহিদ হাসান, মাদারীপুর
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদেরপাড়ে অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসবাসরত কয়েক হাজার মানুষের সমস্যার যেন শেষ নেই। এখানকার মানুষেরা অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে শুরু করে নানান সমস্যায় জর্জরিত । তার মধ্যে প্রধান সমস্যা তাদের বসত ঘর। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৪টি ব্যারাকে টিনের ২৪০ টি ঘর রয়েছে। ঘরগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় প্রায় ৪০টি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। ঘরের টিনের চাল মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে। কুয়াশা ও বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে টিনের চালার উপরে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে পলিথিন। বেড়ার টিন ও লোহার অ্যাঙ্গেলে মরিচা ধরে খুলে পড়ছে। ঘরের বেশির ভাগ দরজা ও জানালা ভাঙাচোরা। মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা বাঁশগাড়ি ইউনিয়ের ৬ নং ওর্য়াডের আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ের  আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর এই করুণ দশা।

ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ২৪০ টি পরিবারের মধ্যে ৪০টি পরিবার এখন আর এসব ঘরে থাকে না। তারা বাধ্য হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে চলে গেছে। সেই জরাজীর্ন ঘর গুলো এখন ফাঁকা পড়ে আছে পরিত্যক্ত ফাঁকা  ঘড়গুলোর মধ্যে ঘটছে নানা প্রকার অবৈধ ঘটনা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৪টি ব্যারাকে টিনের ২৪০টি ঘর রয়েছে। অনেক ঘর ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে। টিউবয়েল গুলো অকেজো হয়ে গেছে। নেই বিশুদ্ধ পানি পানের ব্যবস্থা। নাজুক অবস্থা প্রতিটি ব্যারাকের শৌচাগারের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে সব বয়সের মানুষ । বসত ঘরের  টিনের চালায় মরিচা ধরে বড় বড় ছিদ্র হয়ে আছে। বৃষ্টি পানি থেকে রাক্ষা পাওয়ার জন্য টিনের চালার উপরে পলিথিন বিছিয়ে তার উপর ইট দিয়ে রাখা হয়েছে। ঘরের চারপাশের গাথুনির ইটের গাথুনি ভেঙ্গে পড়ে মেঝেন মাটি সরে গেছে। সিমেন্টের খুটিতে ফাটল ধরে কংক্রিট ধসে পড়ছে। বেড়ার কাঠপঁচে ও টিনে মরিচ ধরে কাঠ আলগা হয়ে বেড়ায় বড় বড় ফাকা তৈরি হয়েছে। ওই ফাঁকা অংশ দিয়ে অনায়াসে একজন ব্যক্তি ঘরে ঢুকে যেতে পারে। ফলে চুরির আশঙ্কায় দিন কাটে বাসিন্দাদের।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রায় বাইশ-তেইশ বছর হয়ে গেছে ঘর গুলোর। এর মধ্যে প্রতিটি ঘরের টিনের চালা ও টিনের বেড়ায় মরিচা ধরেছে। ঘরের দরজা-জানালা ভেঙে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে। শীতের মৌসুমে টিনের ফাঁকফোকর দিয়ে বাতাস ঢোকে। ফলে ঠান্ডায় শিশু ও বৃদ্ধ বয়সের মানুষের রোগ বালাই লেগেই থাকে। বর্তমান অবস্থা, এখানে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা বরু বিবি (৮০) বলেন, আমার কেউ নেই, বৃদ্ধ বয়সে  চলতে ফিরতে পারি না, মানুষ যা দেয় তাই খাই। অনেক আগে সরকার এই ঘর দিয়েছে, এখন ঘর ভেঙ্গে গেছে ঝড় বৃষ্টি আসলে ভয় করে কোথায় যাব।

আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা মুকুলি বেগম (৪৫) বলেন, সামান্য বৃষ্টি আসলেই টিনের চালা দিয়ে বৃষ্টি পানি পড়ে কাপড় চোপড় ও বিছানা ভিজে যায়। ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার বই ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। তখন ঘড়ে থাকাই কষ্টসাধ্য।
আরেক বাসিন্দা জয়নাল সরদার (৫৫) বলেন, আকাশে মেঘ দেখলেই  আতংকিত হয়ে পরে এখানকার মানুষ। ঝড়বৃষ্টির সময় আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে অনেক আতংকে রাত কাটাই। যেকোন সময় ঝড়ে ঘড় ভেঙে আমাদের গায়ে পড়তে পারে। আমাদের যাওয়ার আর কোন যায়গা নেই তাই ভয়ে ও আতংকের মধ্যে এখানেই থাকতে হয়।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা আরও বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশপাশে তাঁদের কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। কাছাকাছি কোন প্রথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় তাদের সন্তানরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাস বলেন, বাঁশগাড়ি গুচ্ছগ্রামটি আমি সরজমিনে পরিদর্শন করবো এবং জরজীর্ন ঘরগুলোর জন্য  সরকারি যে সুযোগ সুবিধা আছে, তার আওতায় আনার চেষ্টা করবো।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা তাহমিনা বেগম বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো অনেক আগে নির্মান করা হয়েছে তাই এগুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সরকার ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের  দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবো যাতে  এই জরাজীর্ণ ঘরগুলো সংস্কার অথবা নতুন ঘরের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category