মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
রংপুরে ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড প্রায় ১২ শ ঘর-বাড়ি উদ্দীপনা ও প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের নতুন কমিটির অভিষেক ৪৭,৭১ ও ২৪শের বিপ্লব অর্থবহ করতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার বিকল্প নাই: শ্রীপুরে দুর্নীতিমুক্ত-সন্ত্রাসমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গ্রাম্য বৈঠক অনুষ্ঠিত  ‎তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন শ্রীপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শারদীয় শুভেচ্ছা ও উপহার বিতরণ নওগাঁর পত্নীতলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান নিহত বদলগাছীতে সাংবাদিক আশরাফুল ইসলামের স্মরণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রংপুরে সাংবাদিক হত্যা চেষ্টা মামলার প্রধান আসামী গ্রেফতার নড়াইলে বাস টার্মিনালে অবৈধ টোল আদায় বন্ধে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ

চামড়া খাতে খেলাপি ৪৮৪৪ কোটি টাকা

রুপান্তর সংবাদ ডেস্কঃ
  • Update Time : শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
  • ৬৫ Time View

রুপান্তর সংবাদ ডেস্ক:  চামড়াশিল্প খাতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৪ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৩৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় নতুন ঋণ দিতে অনীহা দেখিয়েছে ব্যাংকগুলো। এ বছর ৯ ব্যাংক চামড়া ক্রয়ে ২৩২ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দিলেও শেষ পর্যন্ত বিতরণ করা হয় ১২৫ কোটি টাকা। এদিকে পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাবে চামড়া সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ উদ্যোক্তাদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চামড়া খাতে বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে পুনঃতফশিল করা ঋণের অনাদায়ী অঙ্ক ৭ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের চামড়া খাতকে গুরুত্ব দিয়ে কুরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য বিশেষ ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। কিন্তু চামড়া ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ ঋণ নিলে তা আর পরিশোধ করতে চান না। এমনকি ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতফশিলের যে সুযোগ রাখা হয়েছে, অনেকে সে সুযোগ নিতেও নারাজ। তাদের কারও কারও মনোভাব হচ্ছে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করাটা এক প্রকার ঝামেলা। এমনকি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দিলেও তারা ঋণ পরিশোধে অনীহা প্রকাশ করেন। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান যুগান্তরকে বলেন, চামড়া খাতে এবার ঋণ দেওয়ার লক্ষ্য ছিল ২৩২ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত কী পরিমাণ ঋণ ছাড় হয়েছে তা ব্যাংক খোলার আগে বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের একটি অংশ এ টাকা ফেরত দিতে চান না। সে কারণে এ খাতে ঋণখেলাপি অনেক বেড়ে গেছে। যদি তারা ঋণ চান, আবার ফেরত না দেন, তাহলে তাদের কে ঋণ দেবে? তাই ফেরত দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে ঋণ নিতে হবে। নইলে সংকট কাটবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চামড়া ক্রয়ে এবার ১২৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। যা ২০২৪ সালে ছিল ২৭০ কোটি টাকা। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ২৫৯ কোটি, ২০২২ সালে ৪৪৩ কোটি, ২০২১ সালে ৬১০ কোটি টাকা, ২০২০ সালে ৭৩৫ কোটি এবং ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, চামড়া পচনশীল পণ্য হওয়ায় দ্রুত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয়। সারা দেশ থেকে বিভিন্ন আড়তের মাধ্যমে সংগৃহীত চামড়া কিনতে নগদ টাকা প্রয়োজন হয়। এজন্য ঈদ মৌসুমে খণ্ডকালীন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করে আড়তদাররা। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের নিজস্ব মূলধন দিয়ে সারা বছর ব্যবসা করলেও কুরবানির সময় বাড়তি নগদ অর্থের জন্য বিশেষ অর্থায়ন প্রয়োজন হয়। এবার ব্যাংকগুলোর কাছে চাহিদা ছিল ৩০০-৩৫০ কোটি টাকা। দিয়েছে মাত্র ১২৫ কোটি টাকা, যা যথেষ্ট নয়। পর্যাপ্ত নগদ ঋণ সহায়তা পেলে চামড়ায় বিড়ম্বনা কেটে যেত। গরিব-মিসকিনরা চামড়া থেকে কাঁচা টাকা পেতেন। রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধি পেত।

বিটিএ’র তথ্য অনুযায়ী, ট্যানারি মালিক ও বাণিজ্যিক রপ্তানিকারক মিলিয়ে সংগঠনটির সদস্য প্রায় ৮০০। সারা দেশে ১ হাজার ৮৬৬টি বৃহৎ ও মাঝারি আড়ত রয়েছে। এগুলোর বাইরেও ছোট আকারে অনেক আড়ত রয়েছে, যারা মৌসুমি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ঈদুল আজহার সময় চামড়া সংগ্রহ করে। চামড়ার আড়তদার নুর ইসলাম বলেন, এ শিল্পের বেশির ভাগ কাঁচা চামড়া সংগৃহীত হয় ঈদুল আজহার সময়। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতিবছর প্রায় ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়। জাতীয় প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এ খাত থেকে গত অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। এজন্য চামড়া খাতে বিশেষ নজর জরুরি। চামড়া ব্যবসায়ী আজম মিয়া বলেন, ব্যাংকগুলো শুধু ট্যানারি মালিক ও রপ্তানিকারকদের ঋণ দেয়। কাঁচা চামড়া ব্যবসায় জড়িত অন্যদের ঋণ দেয় না। চাহিদা অনুযায়ী টাকা পেলে চামড়া নষ্ট ঠেকানো যেত।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, চামড়া সংরক্ষণে সহায়তা দিতে এবারের ঈদে এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে ৩০ হাজার টন লবণ সরবরাহ করে সরকার। জনতা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতফশিল করতে চান না। মূলত চামড়া ব্যবসায়ীদের কারণে ঋণের অর্থ বরাদ্দ থাকলেও ব্যাংক ঋণ বিতরণে কম আগ্রহ দেখাচ্ছে। সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ট্যানারি ব্যবসায়ীরা দুই শতাংশ টাকা জমা দিয়ে ঋণ নবায়ন করতে চান না। ফলে বরাদ্দ থাকলেও ঋণ বিতরণ সম্ভব হয় না। চামড়া খাতে ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৪০ শতাংশই খেলাপি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, চলতি মৌসুমে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আর ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৫০ টাকা। আর খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ২০ থেকে ২২ টাকা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category