শরিফা বেগম শিউলী, স্টাফ রিপোর্টার:
রংপুর সিটি করপোরেশনের নিষিদ্ধ অটোরিকশার লাইসেন্স বাণিজ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে রংপুরের প্রবীণ সাংবাদিক ও দৈনিক সংবাদ এ-র বিশেষ প্রতিনিধি লিয়াকত আলী বাদলের ওপর প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ নগরীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এসময় হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) উম্মে ফাতেমাকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন তারা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংবাদ পত্রিকার প্রথম পাতায় লিয়াকত আলী বাদলের লেখা একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। শিরোনাম ছিল “রংপুরে জুলাই যোদ্ধাদের নামে অটোরিকশার লাইসেন্স, পাঁচ কোটি টাকা বাণিজ্যের পাঁয়তারা”। প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই যোদ্ধা ও জুলাই রাজবন্দিদের নামে ভুয়া তালিকা তৈরি করে গোপনে ৫০০ নিষিদ্ধ অটোরিকশার লাইসেন্স ইস্যু করে পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রতিবেদন প্রকাশের পরেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্বার্থান্বেষী একটি মহল। অভিযোগ ওঠে, পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দিতে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা মাঠে নামেন। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর কাঁচারী বাজার এলাকায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে থেকে সাংবাদিক বাদলকে তুলে নেয় একদল সন্ত্রাসী। পরে তাকে প্রকাশ্যে মারধর করে একটি অটোরিকশায় তুলে মারধর করতে করতে সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিইওর নিজস্ব কক্ষে বসিয়ে সংবাদ প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হয়। বাদল সংবাদ প্রত্যাহারে রাজি না হলে তাকে জোর করে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সহকর্মী সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার সময় রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরপিইউজে), রংপুর প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, ভিডিও জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বদরগঞ্জ প্রেসক্লাব, তারাগঞ্জ প্রেসক্লাব,কাউনিয়া প্রেসক্লাব,পীরগাছা প্রেসক্লাব,মিঠাপুকুর প্রেসক্লাবসহ প্রায় সব সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এতে অংশ নেন। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল মান্নান, ভুক্তভোগী লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শরিফা বেগম শিউলী, রংপুর সিটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর মানিক, রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি শাহ বায়েজীদ আহামেদ, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুব রহমান, প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার জহির রায়হান জুয়েল, মাই টিভির রংপুর প্রতিনিধি মাহামুদুল হাসান, প্রতিদিনের মাহবুব হোসেন হাবু,দৈনিক কালবেলার রংপুর প্রতিনিধি রেজওয়ান কবীর রনি, চ্যানেল ২৪ এর ফখরুল শাহীন, নিউজ ২৪ এর রেজাউল করিম মানিক, সমকালের রংপুর প্রধান স্বপন চৌধুরী, গ্লোবাল টেলিভিশন এর আব্দুর রহমান রাসেলসহ অনেকে।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিকের ওপর হামলা মানে গণমাধ্যমের ওপর হামলা। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে সাংবাদিক সমাজ রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।” তারা সিইও উম্মে ফাতেমাকে এ ঘটনায় সরাসরি দায়ী করে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানান। উল্যেখ্য,গতকাল বিক্ষোভ চলাকালে সিটি করপোরেশনের একদল কর্মচারী সাংবাদিকদের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একইদিন বিকেলে রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রংপুর প্রেসক্লাবের প্রশাসক রমিজ আলমের সভাপতিত্বে বৈঠকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সভায় সাংবাদিকরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়। সবাই এক কণ্ঠে ঘোষণা দেন “আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। সিইওকে অপসারণ করতে হবে। দাবি না মানা হলে সাংবাদিক সমাজ রাজপথে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।” সমাবেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি আসামিদের গ্রেপ্তার না করা হয়, তবে বুধবার রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। প্রয়োজনে সারাদেশের সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে।
প্রকাশক: মোঃ আবু নাইম, সম্পাদক: তরিকুল ইসলাম , ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: নুরুজ্জামান দীপু, বার্তা সম্পাদক: ফারহান খান লাবিব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
ইমেইল: rupantorsangbad@gmail.com