বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
তরুন প্রজন্মের জন্য নতুন গান নিয়ে আসছেন কন্ঠ শিল্পী তমালিকা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করায় উপদেষ্টা পরিষদের কিছু সদস্যের মন খারাপ : মেজর হাফিজ জনগণের ভোট দেয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে : রংপুরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রংপুরের গঙ্গাচড়ায় নিখোঁজ হওয়া দুই শিশুর মরদেহ  উদ্ধার টুঙ্গিপাড়ায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের থানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত পেকুয়া শহীদ ওয়াসিমের স্মরণে স্মৃতি ফলক উন্মোচন ও বৃক্ষ রোপণ  জুড়ীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উদযাপন  ত্রিশালে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে খেলা ও পুরস্কার বিতরণ জুলাই শহিদ পরিবার,আহত ও সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিয়ে সম্মেলন ও দোয়া মাহফিল শ্রীপুরে গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিএনপির বিজয় র‍্যালীতে জনতার ঢল 

কোনো পদক্ষেপেই কমছে না পেঁয়াজের ঝাঁজ

রুপান্তর সংবাদ ডেস্কঃ
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ১২৭ Time View

রুপান্তর সংবাদ ডেস্কঃ

ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পরদিন থেকেই দেশে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। বৃহস্পতিবার যে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১০-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই একই পেঁয়াজ সোমবার বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৪০ টাকা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে নেমেছে।

পাশাপাশি সরকারি সংস্থা টিসিবির পক্ষ থেকে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি বিক্রি করা হচ্ছে। ভারত থেকে আগের এলসি করা পেঁয়াজ দেশে আনা হচ্ছে। এত পদক্ষেপের পরও বাজারে কমছে না পেঁয়াজের ঝাঁজ।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারও চিহ্নিত সেই চক্র ভোক্তাকে জিম্মি করেছে। তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। জরিমানা করেই দায় সারছে। চিহ্নিত সিন্ডিকেটের কাছে কর্তৃপক্ষ একরকম অসহায় এমন মন্তব্য করছেন সব শ্রেণির ভোক্তা।

সোমবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকা, যা শনিবার ও রোববার একই দাম ছিল। তবে বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছিল ১৩০ টাকা। পাশাপাশি প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা, যা শনিবার ও রোববার একই দাম ছিল। তবে বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছিল ১১০ টাকা। আর খুচরা বাজারে দেশি নতুন মুড়ি কাটা পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা।

এদিকে বাজার তদারকি সংস্থা বলছে, মূলত আড়তদার সিন্ডিকেটের কারসাজিতেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর চক্রের সদস্যরা আড়ত থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৯০-১০০ টাকা বাড়িয়ে ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি করেছে। মুহূর্তের মধ্যে রাজধানীসহ সারা দেশের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০০-২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে এবারও চিহ্নিত সেই চক্র ভোক্তাকে জিম্মি করে তিন দিনে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা। সোমবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে রাজধানীসহ সারা দেশে খুচরা বাজার, পাইকারি ও আমদানি পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। এ সময় ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা ছাড়াও অসাধুতার দায়ে জরিমানা করা হচ্ছে। ফলে সকাল থেকেই এ দুই বড় আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি এক প্রকার বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি সরকারসংশ্লিষ্টদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উধাও করা হয়েছে পেঁয়াজ।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সূত্রে জানা যায়, পেঁয়াজ আমদানিকারক ও আড়তদারদের একটি গ্র“প সব সময় ওত পেতে থাকে। কখন ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, সেই অপেক্ষায় থাকে। অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা অজুহাতের অপেক্ষায় থাকে ওই চক্রটি। সৃষ্টি করে কৃত্রিম সংকট। রাতারাতি অস্বাভাবিক গতিতে বাড়িয়ে দেয় পেঁয়াজের দাম। ২০১৯ সালে পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা কেজি থেকে বেড়ে ৩২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। ওই সময় পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজির দায়ে চট্টগ্রাম ও টেকনাফকেন্দ্রিক ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সব সময়ই তারা থাকে অধরা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর রাজধানীর পাইকারি আড়ত শ্যামবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তদার সিন্ডিকেট একসঙ্গে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তোলে। তারা মুহূর্তে দাম বাড়িয়ে বিক্রি শুরু করে। পরিস্থিতি এমন বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৯০-৯৫ টাকা বিক্রি হলেও ভারত রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর সেই একই পেঁয়াজ ১৮০ টাকায় বিক্রি করে। পাশাপাশি ৯০ টাকা কেজি দরে ভারতীয় পেঁয়াজ ১৭০ টাকায় বিক্রি করে। এছাড়া ৫৫ টাকা কেজি পাইকারি দরে বিক্রি হওয়া চীনা পেঁয়াজ ১২০ টাকায় বিক্রি করে। আর ৮০ টাকার পাকিস্তানি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৪০ টাকা। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, আড়ত থেকে বাড়তি দামে বিক্রি হওয়ায় খুচরা পর্যায়ে হুহু করে বেড়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরাও প্রমাণ পেয়েছেন।

রাজধানীর কাওরান বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. সোনাই আলী  বলেন, আড়তদারদের কারণে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তারা দাম না বাড়ালে খুচরা বাজারে বাড়ত না। বেশি দামে কিনে এনে খুচরা ব্যবসায়ীরা ক্রেতার কাছে বেশি দামে বিক্রি করেছে। তবে আড়তদাররা দাম বাড়ানোর কারণে প্রথম অবস্থায় খুচরা বিক্রেতারা আগের কম দামে কেনা পেঁয়াজও বেশি দামে বিক্রি করেছেন, যা ঠিক না।

সোমবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, পেঁয়াজ মজুতদারদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে ইতোমধ্যে কিছু মজুতদারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখনো যাদের চিহ্নিত করা হয়নি, তাদেরও চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি জানান, খাতুনগঞ্জ ও শ্যামবাজারে স্তূপে স্তূপে সাজানো পেঁয়াজ আমাদের অভিযানের পরে কীভাবে উধাও হয়ে গেল, গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বের করা হচ্ছে। কারা পেঁয়াজ লুকিয়ে রেখেছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে দেশের ৫৪টি জেলায় অভিযান পরিচালনা করে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

তিনি জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। মুড়ি কাটা পেঁয়াজ ইতোমধ্যে বাজারে আসা শুরু করেছে।

এদিকে সোমবার শ্যামবাজারে অভিযান পরিচালনা করে ভোক্তা অধিদপ্তর। এখানকার নবিন ট্রেডার্সে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় তিনি যুগান্তরকে বলেন, এখানে ৮ ডিসেম্বর প্রতি কেজি ভারতীয় এলসি পেঁয়াজ এই প্রতিষ্ঠান বিক্রি করেছে ৯৩-১০৩ টাকা কেজি। কিন্তু ৯ ডিসেম্বর সেই একই পেঁয়াজ ১৪৯ টাকা কেজি। শুধু রাতের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করেছে।

এ প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পেঁয়াজ কিনে গুদামজাত করে রেখেছে। দুই দিন তারা কোনো পেঁয়াজ বিক্রি করেনি। তার কাছে এখন ১৩৬ বস্তা পেঁয়াজ আছে। তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অবৈধভাবে অতিমুনাফা করতে পেঁয়াজ মজুত করেছে। এতে এ প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই পাইকারি আড়তে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ৭-৮ ডিসেম্বর বাজারে যে মূল্যে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, ৯ ডিসেম্বর থেকে বেশি দামে বিক্রির প্রবণতা দেখা গেছে। সব মিলে অনিয়ম পাওয়া গেছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভারত থেকে ৫২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আনার উদ্যোগ : দেশের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভারত থেকে ৫২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্রটি জানায়, ভারতীয় দূতাবাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রাইভেট সেক্টরের ৫২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা আছে। সেগুলো যাতে ছাড়া হয়, সে বিষয়ে তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুতই এসব পেঁয়াজ দেশে আসবে।

বিভিন্ন অনিয়মে ১২২টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা : পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সোমবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অভিযান চালিয়েছে। ৫০ জেলায় ৫৩টি বাজার একযোগে অভিযান চালিয়ে ১২২টি প্রতিষ্ঠানকে ৮ লাখ ২১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতও অভিযান চালিয়েছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category