বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
টুঙ্গিপাড়ায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের থানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত পেকুয়া শহীদ ওয়াসিমের স্মরণে স্মৃতি ফলক উন্মোচন ও বৃক্ষ রোপণ  জুড়ীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উদযাপন  ত্রিশালে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে খেলা ও পুরস্কার বিতরণ জুলাই শহিদ পরিবার,আহত ও সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিয়ে সম্মেলন ও দোয়া মাহফিল শ্রীপুরে গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিএনপির বিজয় র‍্যালীতে জনতার ঢল  ট্রাম্পকে গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে চিঠি ইসরায়েলি অবসরপ্রাপ্ত ৬শ’ কর্মকর্তার গণঅভ্যুত্থান দিবসে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করলেন প্রধান উপদেষ্টা জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জুলাই ঘোষণাপত্র: তাহেরের নেতৃত্বে অংশ নেবে জামায়াতের প্রতিনিধিদল

বিদেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

রুপান্তর সংবাদ ডেস্কঃ
  • Update Time : সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩
  • ১৪৭ Time View

রুপান্তর সংবাদ ডেস্কঃ

বাংলাদেশে আরও বিদেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার বৃহত্তর বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছে। ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই-ফিকি) ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন এবং দুদিনব্যাপী ইনভেস্টমেন্ট এক্সপোর উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

রোববার সকালে হোটেল র‌্যাডিসন ব্লুতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সারা দেশে প্রতিষ্ঠিত ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৯টি হাই-টেক পার্ক উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, এককভাবে কোনো দেশ এক খণ্ড জমি চাইলে আমরা তাও দেব। আবার যৌথ উদ্যোগে করতে চাইলে সেটার ব্যবস্থা করা হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতেও করা যেতে পারে। তিনি বলেন, তার সরকার অনেকগুলো সংস্থা তৈরি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা), বাংলাদেশ ইকোনমিক প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা), বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথরিটি (এইচটিপিএ) এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপিএ)। বিনিয়োগের সুবিধার্থে বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে ওয়ান স্টপ পরিষেবা চালু করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগ পরিষেবা প্রদানকারী সব অফিস সম্পূর্ণ অনলাইন এবং ডিজিটালাইজড করার পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। একই সঙ্গে কর মওকুফ, রেমিট্যান্স রয়্যালটি, প্রস্থান নীতি, লভ্যাংশ এবং মূলধন সম্পূর্ণ প্রত্যাবর্তন, আইন দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষাসহ বিনিয়োগ নীতিকে আরও সহজ করার জন্য অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, তার সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২-এ সরবরাহ খাত, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবসংশ্লিষ্ট খাত এবং পর্যটন খাতকে শিল্প হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

‘ব্লু-ইকোনমি’র প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ব্লু-ইকোনমি খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আমরা নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। লজিস্টিক শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং এ খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে অন্য সব শিল্প খাতের উন্নতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে জাতীয় লজিস্টিকস ডেভেলপমেন্ট পলিসি প্রণয়নের কাজ চলছে। বাংলাদেশে এখন জ্বালানি, পানি, লজিস্টিকস এবং পরিবহণ খাতে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবকাঠামো গড়ার সুযোগ রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে শুধু লজিস্টিকস খাতেই ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ও শক্তিশালী রপ্তানি কৌশল এবং শিল্পনীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপাত ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। বাংলাদেশ এখন প্রায় সতেরো কোটি মানুষের একটি বড় অভ্যন্তরীণ বাজার। এটি ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তখন যুক্তরাজ্য ও জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমান উচ্চ প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডকে আমাদের দেশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত ও ধনিক শ্রেণির সংখ্যা হবে ৩ কোটি ৪০ লাখ। ২০৪০ সালের মধ্যে আনুমানিক মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ৫ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলারে। কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থল হতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি, বিনিয়োগবান্ধব নীতি, বৃহৎ অভ্যন্তরীণ বাজার, কৌশলগত অবস্থান, উচ্চ মুনাফা, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সুবিধার কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের কাছে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং রপ্তানির জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, এসব সাফল্যের ওপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ এখন ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মোট জনগোষ্ঠীর ৭৮.৫৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। বাংলাদেশে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার রয়েছে যা বিশ্বব্যাপী অনলাইন শ্রমের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী। আইসিটি রপ্তানি খাতে ২০২৩ সালে আমরা অর্জন করেছি ১.৯ বিলিয়ন ডলার। আশা করা হচ্ছে ২০২৫ সাল নাগাদ এ খাতে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে। ‘শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়সমূহ ও বাণিজ্য সংহতকরণের ফলে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২,৭৯৩ মার্কিন ডলারে। জিডিপির আকার ২০০৬ সালের ৪ লাখ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০.৩১ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যের হার প্রায় ৩ গুণ কমে ১৮.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন খাত ছাড়াও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এ সাফল্যের পেছনে রয়েছে-ব্যক্তি খাতে ভোগ বৃদ্ধি, যাকে প্রাথমিকভাবে সহায়তা করছে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ, শক্তিশালী গ্রামীণ অর্থনীতি, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ ও জ্বালানি খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া, ফিকির সভাপতি নাসের ইজাজ বিজয় ও সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি দীপল আবেবিক্রমা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী কয়েকজন আন্তর্জাতিকভাবে সফল বিনিয়োগকারীও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে ‘ফর এভার ফিউচার ফরওয়ার্ড’ শিরোনামের একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ফিকির গবেষণা প্রতিবেদন ‘ক্যাটালাইজিং গ্রেটার এফডিআই ফর ভিশন-২০৪১ : প্রাইওরিটিজ ফর বিল্ডিং এ কনডাক্টিভ ট্যাক্স সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ এবং ইএসজি কমিটি প্রণোদিত ‘ইএসজি স্ট্র্যাটেজিস অ্যান্ড ইমপ্যাক্টস ফ্রম দি মেম্বারস অব এফআইসিসিসিআই’ শীর্ষক দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে প্রখ্যাত বাংলাদেশি শিল্পী ও ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানের তৈরি একটি স্মারক উপহার দেওয়া হয়; যা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার প্রতীক। এফআইসিসিআই’র ৬০ বছর উদযাপন এবং বিনিয়োগ এক্সপো-২০২৩-এর কৌশলগত অংশীদার হলো বিডা এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

ইনভেস্টমেন্ট এক্সপোর ৪০টি স্টল সবার জন্য উন্মুক্ত। ‘র‌্যাডিসন ব্লু’-এর ওয়াটার গার্ডেনে ‘ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো-২০২৩’ আজও উন্মুক্ত থাকবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category