জাহিদ হাসান, মাদারীপুর 

মাদারীপুরে শ্রেণিকক্ষে দুষ্টুমি করায় ১২ বছরের এক মাদ্রাসাছাত্রকে বেত দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানতে গেলে দরজা বন্ধ করে রুমের ভেতর আটকিয়ে পরিবারের আরো ৪ সদস্যকে শিক্ষকের নেতৃত্বে গণপিটুনী দেয় এলাকাবাসী। পরে ত্রিপল নাইনে কল পেয়ে আহতদের উদ্ধার করে পুলিশ।

রোববার বিকেলে ডাসার উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের পশ্চিম মাইজপাড়া আদর্শ হাফেজিয়া মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন, মাদারীপুর শহরের কুকরাইল এলাকার জামাল মৃধা (৪৬), তার ছেলে আবির মৃধা (১২), জামালের স্ত্রী আয়েশা বেগম (৩৮), একই এলাকার খলিল মৃধার ছেলে নাইম মৃধা (২২) বজলু হাওলাদারের ছেলে ফরিদ হাওলাদার (২৭), করদি গ্রামের এনতাজউদ্দিন সরদারের ছেলে শহীদ সরদার (৫)।

স্বজনরা জানায়, রোববার দুুপুরে বন্ধুদের সাথে দুষ্টুমি করে মাদারীপুর শহরের কুকরাইল এলাকার আবির। বিষয়টিতে ক্ষিপ্ত হয়ে যান ডাসার উপজেলার পশ্চিম মাইজপাড়া আদর্শ হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ফকির মোক্তারুজ্জামান। পরে দুই শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় নাজেরা বিভাগের শিক্ষার্থী আবিরের হাতপা চেপে ধরে বেত দিয়ে বেদম পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠে শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ভয়ে পালিয়ে বাড়িতে চলে আসে আবির। বিষয়টি জানতে বিকেলে মাদ্রাসায় যায় আবিরের পরিবারের সদস্যরা।

এ সময় তাদের একটি রুমের ভেতর আটকিয়ে রাখা হয়। পরে অভিযুক্ত শিক্ষকের নেতৃত্বে আবিরের বাবাসহ আরো ৪ জনকে গণপিটুনী দেয় এলাকাবাসী। জরুরি সেবা ত্রিপল নাইনে কল পেয়ে আহতদের উদ্ধার করে পুলিশ। রাত সাড়ে ১১টার দিকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিক্ষার্থীসহ পরিবারের ৫ জনকে। আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এই ঘটনায় ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১০ জনের নামে মামলা করে ভুক্তভোগীর পরিবার। পরে অভিযান চালিয়ে মূল অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আবির জানান, আমাকে বড়হুজুর (মাদ্রাস শিক্ষক) মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় বেত দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে ভয়ে আমি একা বাড়িতে চলে আসি।

আহত জামাল মৃধা বলেন, ছেলেকে মারধরের বিষয় জানতে গেলে এলাকার লোকজন ও মাদ্রাসার শিক্ষক তারা সবাই মিলে আমাদের গণপিটুনী দেয়। একটি রুমের ভেতর আটকিয়ে রাখে। পরে ৯৯৯-এ কল দিলে আমাদের সবাইকে উদ্ধার করে পুলিশ।

আবিরের মা আয়েশা বেগম বলেন, আমার ছেলে ও আমাদের উপর হামলার ঘটনায় দোষীদের বিচার চাই। আমরা জানতে গেলে ১৫-২০ জন লোক একত্রে আমাদের উপর এই হামলা চালায়।

মাদারীপুরের ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম শফিকুল ইসলাম জানান, মাদ্রাসাছাত্রকে মারধরের ঘটনায় প্রধান আসামী ফকির মোক্তারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের ধরতে অভিযান চলছে।

প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক ফকির মোক্তারুজ্জামানের বাড়ি বাগেরহাটের রামপালে। একবছর আগে ওই মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি।