এইচ,এম শহিদুল ইসলাম, পেকুয়া
কক্সবাজারের পেকুয়ায় ৩ মাস পর অপহৃত যুবক আলী আকবরের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করল স্বজনরা। দফায় দফায় মুক্তিপণ দাবী করা হচ্ছে। টাকা না দিলে প্রাণে হত্যার হুমকি এসেছে। অপহরণের ৩ মাস পর নিখোঁজ পুত্রের মুক্তির দাবীতে মা’সহ স্বজনরা প্রেস ক্লাবে এসে সংবাদ সম্মেলন করে। অপহৃত আলী আকবর উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাবেকগুলদি টেকপাড়ার করিমদাদের পুত্র।
২৪ মার্চ (রবিবার) দুপুর ১২ টার দিকে নিখোঁজ আলী আকবরের স্বজনরা পেকুয়ায় উপকুলীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন। এ সময় পেকুয়ায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেট্টনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকদের ছেলে অপহরণের চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক তথ্য ফাঁস করে। এ সময় সাংবাদিকরা নিখোঁজ আলী আকবরের স্বজনদের কাছ থেকে ভিডিও বক্তব্য রেকর্ড করেন।
বক্তব্যে আলী আকবরের মা সামারুক বেগম বলেন, ৩ মাস আগে আমার ছেলে আলী আকবর (২৮) অপহৃত হয়েছে।
গেল বছরের ১২ ডিসেম্বর থেকে আলী আকবর অপহরণ হয়েছে। তাকে অপহরণকারী চক্র পেকুয়া থেকে জিম্মী করে নিয়ে যায়। এরপর জিম্মীদশা থেকে ফেরাতে অপহরণকারীচক্র মুঠোফোনে অন্তত ৭/৮ বার টাকার প্রস্তাব দেয়। প্রথমে ৩০ লক্ষ টাকা, এরপর দফায় দফায় সর্বনিন্ম ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। ভয়াবহ নির্যাতনের ভিডিও চিত্র মুঠোফানের ইমোর মাধ্যমে ওই প্রান্ত থেকে আমাদের এখানে পাঠান। রক্তাক্ত মারধরের ভিডিও আমরা দেখেছি। লোহার শিকলে বেঁধে চরম নির্যাতন করছিল। আমার ছেলেকে দিয়ে এ দৃশ্য দেখিয়ে আমার কাছ থেকে মুক্তিপণ খোঁজে। ছেলে কান্নাকাটি করছিল। আলী আকবর আমাকে বলেছে মা আমাকে বাঁচান। টাকা না দিলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। এরপর আমরা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে গিয়েছি। তারা কল ট্ট্যাকিং করেছে। আলী আকবরের অবস্থান টেকনাফের বাহারছড়ায় মুঠোফোনের লোকেশনে সনাক্ত হয়েছে। তবে আমরা প্রশাসনিক তেমন কোন সহযোগিতা পাইনি। তিনি আরো জানান, কক্সবাজার সদর থানায় জিডি করি। পরবর্তীতে চকরিয়া ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সি.আর ৩৯৯/২৪ মামলা রুজু করি।
পেকুয়া থানা পুলিশকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠানোর আদেশ দেন। থানার এস,আই রাজেস বড়–য়া তদন্ত করছে। তদন্ত হচ্ছে ধীর গতিতে। এতে করে স্পর্শকাতর অপহরণের মতো জঘন্যতম বিষয়টি অনেকটা অস্পষ্ট থেকে গেছে। ওই ঘটনার অগ্রগতি অনেকটা থেমে গেছে। আলী আকবরের বোন রাবেয়া বসরী জানান, আমার ভাইয়ের সাথে পেকুয়া সদরের সাবেকগুলদি টেকপাড়ার মৃত মোক্তার আহমদের পুত্র মাহামুদুল করিম গংদের সাথে বিরোধ আছে। এর আগেও মাদক কারবারী মাহামুদুল করিমসহ ৫/৬ জনের চক্র অপহরণ করে। এটি দ্বিতীয় অপহরণের ঘটনা।
মাহামুদুল করিম দুর্ধর্ষ মাদক কারবারী। ইয়াবা নিয়ে ৫/৬ বার প্রশাসনের হাতে ধরা পড়ে। জেলে গেছে। তার দুই বোন টেকনাফের বাহারছড়ায় বিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে তার মাদকের সুত্রপাত। মহি উদ্দিন নামক আরেক মাদক কারবারীর ভাগ্নি শাহানুর বাড়িও বাহারছড়ায়। মূলত ওই চক্রই আমার ভাইকে এখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে টেকনাফের বাহারছড়ায় জিম্মী করে রেখেছে। আলী আকবরের খালা ছুরা বেগম বলেন, আমার ভাগিনাকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করেছে। আমরা টেকনাফ থানায় গিয়েছি। কক্সবাজার সদর থানায় গিয়েছি। পেকুয়া থানায়ও সহযোগিতা চেয়েছি। র্যাবের কাছেও ধর্ণা দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোন কিছুর কুল কিনারা নেই।
গত ১৫ দিন ধরে অপহরণকারী চক্র আর কোন তথ্য দিচ্ছে না। বেঁচে আছে কিনা জানিনা। পেকুয়া থানার এস,আই ও তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজেস বড়–য়া জানান, এ বিষয়টি স্পর্শকাতর। তদন্ত চলমান রয়েছে। তবে কিছু তথ্য প্রমাণে টেকনাফের কথা উঠে এসেছে। তারা মামলাটি সেখানে করলে উপকৃত হতেন।
Leave a Reply