শফিকুল আলম ইমন, রাজশাহী
বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্যতম ও ঐতিহ্যবাহি উপজেলা রাজশাহীর গোদাগাড়ী।এই উপজেলার মাটির রং লাল। উপজেলার জমিগুলো উঁচু-নিচু ঢেউ খেলানো সৌন্দর্য্যমন্ডিত। কিন্তু এই ঐতিহ্য দিনে দিনে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে টাকা উপার্জনের জন্য জমির মালিকদের অর্থেও লোভ দেখিয়ে, আবার অনেক সময় ভয়-ভীতি দেখিয়ে জমির উপরীভাগের মাটি কেটে নিয়ে ইট ভাটায় বিক্রি করছে। এতে করে নষ্ট হচ্ছে ঐহিত্য অন্যদিকে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ফসলী জমির। এই মাটি বহন করা হচ্ছে খোলা ট্রলিতে করে। একারনে মাটি রাস্তায় পড়ছে। রাস্তায় মাটি পড়ায় জনগণের যাতায়াতের কষ্ট করছে। এছাড়াও সামান্য বৃষ্টি কিংবা কোন কারনে রাস্তায় পানি পড়লে মাটির রাস্তায় মত রাস্তা হারায় চলাচলের উপযোগিতা। দীর্ঘদিন এরকমই অভিযোগ ঐ এলাকার জনসাধারণের।
পুকুর খনন এবং আবাদী জমির উপরীভাগের মাটি কাটা থেকে বিরত রাখতে এবং দোষিদের শাস্তির দাবী জানিয়েছেন ঐ এলাকার কৃষক, সচেতন মহল ও এলাকাবাসী।
সম্প্রতি রাজশাহী চাপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের পাশে আলিমগঞ্জ ন্যাশনাল পেট্রোল পাম্পের পাশে এমবিএন ইট ভাটার পেছনে ফসলী জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে একটি ইট ভাটায়। সেখানে নিয়ম করে সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে একটি প্রভাবশালী মহল কৃষকদের ফসলী জমির মাটি কেটেই চলেছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায় প্রায় ২০ বিঘা জমির মাটি কেটে ড্রাম ট্রাকে করে রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার দিন রায়পাড়া রেল ক্রসিং এর কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। যা বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইনের পরিপন্থি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ঐ এলাকার কয়েকজন বলেন, গোদাগাড়ী উপজেলার ছয়ঘাটিতে অবৈধভাবে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে তা আশপাশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন একটি প্রভাবশালী মহল । প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাত ৯ টার পর থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত মাটি কেটে ট্রাকে করে রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। তবে দিনের বেলায় মাটি কাটা বন্ধ রাখা হয়।
এছাড়াওা গোদাগাড়ীতে জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করা হচ্ছে। গত দুই বছরে অবৈধভাবে ২৪৫টি পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে। পাশাপাশি পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পুকুর খনন থামাতে প্রশাসন অভিযান ও জরিমানাও করছে । জরিমানা পরিশোধের পর আবারও রাতের অন্ধকারে চলছে পুকুর খনন। অথচ তিন ফরসী জমি নষ্ট করে কোনভাবেই পুকুর খনন, আবাসন ও কলকারখানাসহ অন্যকোন স্থাপনা করা যাবেনা বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ রয়েছে । কিন্তু গোদাগাড়ীতে এই নির্দেশনা কেউ মানছেনা। এদিকে উপজেলার চৈতন্যপুরে প্রকাশ্যে চলছে পুকুর খনন।
সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী গোদাগাড়ীর সহকারি কমিশনার (ভূমি) জাহিদ হাসান বলেন, মাটি কাটার অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, আপনি স্পটে চলে আসবেন, স্পটে এসে যদি দেখেন তাদের অনুমতি নাই তাহলে আমাকে ফোন দিবেন ; আর যদি অনুমতি থাকে, আপনার যদি কোন সন্দেহ হয়, তাহলে আমাকে ফোন দিবেন, আমি চলে যাব, অথবা আমি লোক পাঠিয়ে দেব, যদি আপনার কোন বক্তব্য থাকে বা জানার থাকে তাহলে দিয়ে আসবো। বর্তমানে আপনার উপজেলায় এরকম অনুমোদিত পুকুর খনন বা মাটি কাটা চলছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুকুর কোন খনন নাই, তবে প্রাকৃতিক কারনে যেগুলো ভরাট হয়ে যায়, সেগুলো আমরা সংস্কারের অনুমতি দেই। আপনি জানেন যে সাম্প্রতিক বন্যার কারনে বেশ কিছু পুকুরের পাড় ভেঙে গেছে, সেগুলো পাড় বাঁধাই করার অনুমতি আমরা দিয়েছি। এরকম সম্প্রতি সংস্কারের অনুমতি দিয়েছেন, এমন দু'একটির জায়গার নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওভাবে মনে রাখবো ? আমাদের রেজিষ্টার মেইনটেইন করা হয়, আপনি চাইলে দেখে যেতে পারেন।
এদিকে, রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ গনমাধ্যমকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কেউ যদি তাঁর নাম করে পুকুর খনন করার কথা বলে থাকেন তবে সাথে সাথে স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করুন। এক্ষেত্রে কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবেনা।
উল্লেখ্য, রাজশাহী জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, ২ বছর আগে গোদাগাড়ী উপজেলায় পুকুরের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৩৮ টি। বর্তমানে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৮৩টিতে। অর্থাৎ দুই বছরে ২৪৫টি পুকুর খনন করা হয়েছে। তবে স্থানীয় কৃষকদের দাবি, এ সময়ের মধ্যে ৩ শতাধিক পুকুর খনন করা হয়েছে। খনন বন্ধে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ১১ বার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ১১টি মামলা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জনকে জরিমানা ও ১ জনকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
প্রকাশক: মোঃ আবু নাইম, সম্পাদক: তরিকুল ইসলাম , ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: নুরুজ্জামান দীপু, বার্তা সম্পাদক: ফারহান খান লাবিব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
ইমেইল: rupantorsangbad@gmail.com