বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ১২:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করায় উপদেষ্টা পরিষদের কিছু সদস্যের মন খারাপ : মেজর হাফিজ জনগণের ভোট দেয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে : রংপুরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রংপুরের গঙ্গাচড়ায় নিখোঁজ হওয়া দুই শিশুর মরদেহ  উদ্ধার টুঙ্গিপাড়ায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের থানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত পেকুয়া শহীদ ওয়াসিমের স্মরণে স্মৃতি ফলক উন্মোচন ও বৃক্ষ রোপণ  জুড়ীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উদযাপন  ত্রিশালে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে খেলা ও পুরস্কার বিতরণ জুলাই শহিদ পরিবার,আহত ও সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিয়ে সম্মেলন ও দোয়া মাহফিল শ্রীপুরে গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিএনপির বিজয় র‍্যালীতে জনতার ঢল  ট্রাম্পকে গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে চিঠি ইসরায়েলি অবসরপ্রাপ্ত ৬শ’ কর্মকর্তার

শিশু শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটালেন অধ্যক্ষ

শফিকুল আলম ইমন, রাজশাহী
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪
  • ২০২ Time View

শফিকুল আলম ইমন, রাজশাহী

এক শিশু শিক্ষার্থীকে বেদম পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মওলার বিরুদ্ধে।

পুলিশ লাইনস স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেনীর ঐ শিশু শিক্ষার্থীর নাম সারোয়ার হাসান সিফাত (১২)। সে নগরীর কাশিয়াডাঙা কোর্ট কলেজ এলাকার সাইদ হাসানের ছেলে।

আহত শিশু শিক্ষার্থী সিফাতের বাবা জানান, গত শনিবার স্কুল চলাকালীন সিফাতকে বেদম পেটান অধ্যক্ষ গোলাম মওলা। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে বাসায় কাউকে বিষয়টি না জানিয়ে শুয়ে পড়ে সিফাত। বিকেলে প্রচন্ড জ্বরে কাঁপতে থাকলে তার বাবা-মা হাতে পায়ে বেতের বাড়ীর দাগ দেখতে পান। এরপর পোশাক খুলে সারা শরীরে মারের দাগ দেখতে পান তারা। এ অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ওষুধ-পথ্য লিখে ছেড়ে দেন চিকিৎসক। এরপর তার বাবা ও দাদা আরএমপি’র কাশিয়াডাঙা থানায় গেলে তারা ঘটনাস্থল রাজপাড়া থানায় অভিযোগ দেয়ার পরমর্শ দেন। রাজপাড়া থানায় গেলে তারাও রাত দুটো পর্যন্ত বসিয়ে রেখে অভিযোগ গ্রহন করেননি। পরেরদিন জেলা প্রশাসক কার্যলয়ে গেলে তারা বলেন, যেতেতু এটি পুলিশ পরিচালিত প্রতিষ্ঠান আপনারা পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ করুন। এরপর আমরা পুলিশ কমিশনারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

কথা বলার একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সিফাতের বাবা, তিনি বলেন, মার খেতে খেতে একপর্যায়ে সিফাত স্যারের দুই পা জড়িয়ে ধরে, আমাকে আর মারবেন না স্যার, আমাকে মাফ করে দেন। আবারও পেটাতে থাকলে সিফাত সিট বেঞ্চের নীচে পড়ে যায়, তখন অধ্যক্ষ বলেন, দোষ স্বীকার কর, তাহলে আর মারবো না। আমার এ কথা বিশ্বাস না হলে পুলিশ লাইনস স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেনীর কক্ষে বসানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করলেই বোঝা যাবে। এদিন সকাল ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে।

কি অপরাধে পিঠিয়েছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সাদা কাগজে সহপাঠি মেয়েদের প্রথম অক্ষর লেখার কারনেই নাকি তাকে পেটানো হয়েছে। এ কথা তার সহপাঠীরা বলেছে। তবে, সিফাত বলছে মেয়েদের নামের প্রথম অক্ষর লিখিনি আমি, আমি আমার ছেলে বন্ধুদের নামের প্রথম অক্ষর প্লাস প্লাস দিয়ে লিখেছি সাদা কাগজে।

এই সংবাদ লেখার আগ মুহুর্তে (আজ সোমবার বিকাল ৪ টা) সিফাতের বাবা ইউনিসেফ’র মাধ্যমে রাজশাহীর আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ সহযোগিতা না করায় অধ্যক্ষ বারবার সমাধান করার চাপ দিচ্ছেন আর টাকার লোভ দেখাচ্ছেন। এ কারনে আজ ইউনিসেফ এর সহযোগিতা নিয়েছি।

এদিকে, সিফাতের দাদা আব্দুল হান্নান শিশুটির শরীরে ক্ষতসহ ছবি ফেসবুকে পোষ্ট দিলে ফেসবুক জুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। এতে নানা সময়ে নানা অপকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসে গোলাম মওলার বিরুদ্ধে।

এর আগেও বেশ কয়েকবার নানা অপকর্ম নিয়ে সংবাদের শিরোনাম হন অধ্যক্ষ ড. গোলাম মওলা। এরমধ্যে সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তার ফাঁশ হওয়া অডিও ক্লিপে তিনি বলেন ‘ বাদশা না জিতলে এ সরকারের পতন নিশ্চত। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তাকে পুলিশ দিয়ে পিঠিয়ে হাত-পা বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া, হত্যার হুমকি সহ নানা অপকর্ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। অভিযোগ রয়েছে তার ডক্টরেট ডিগ্রি ভুয়া। এ কারনে ইত:পূর্বে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী এক পুলিশ কমিশনার তাকে ডক্টরেট ডিগ্রি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, চাকুরী জীবনের প্রথমে তিনি রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) রেন্ট কালেক্টর ছিলেন। পরবর্তীতে রাজশাহীর দুর্গাপুর কলেজে কর্মরত ছিলেন। জামায়াত বিএনপি সরকারের আমলে তৎকালীন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ও বিএনপি নেতা প্রয়াত সালাউদ্দিন বেবীর জোর সুপারিশে গোলাম মওলা’কে রাজশাহী পুলিশ লাইনস্ স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান গোলাম মওলা মানুষ গড়ার কারিগরের ট্যাগ লাগিয়ে অর্থাৎ শিক্ষক হয়েও তিনি শিক্ষার বিষয়ে মিথ্যের আশ্রয় নেন। তিনি নিজেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী বলে প্রচার করে নামের পূর্বে ডক্টরেট ডিগ্রির ড. ব্যবহার করেন। অথচ যে আমেরিকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন বলে দাবী করেন সেই বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদিত নয়। অপরদিকে নামের পূর্বে ডক্টরেট ডিগ্রি ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন। যা তিনি তোয়াক্কা করেন না। রাজশাহী মহানগরীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের কাছে তিনি পাঁচতলার একটি আলিশান বাড়ীর মালিক। অথচ তিনি এবং তার চাকুরীজীবি স্ত্রী’র এযাবৎকালের পাওয়া বেতন দিয়ে এমন আলিশান বাড়ীর মালিক হওয়া কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।

এত ঘটনার পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গোলাম মওলার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় সাধারণের মনে এখন একটাই প্রশ্ন তার খুঁটির জোর কোথায় ??

এসব বিষয়ে কথা বলতে অধ্যক্ষ গোলাম মওলার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ছাত্রের অভিভাবকের সাথে আমার একটা সুন্দর সমাধান হয়ে গেছে। আসলে আমার-ই তো ছাত্র। এসব কথা আমি মোবাইলে বলতে চাচ্ছি না আপনি অফিসে চা খেতে আসলে সব বলতে পারবো।

নগর পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র এডিশনাল পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, এরকম একটি অভিযোগ কমিশনার স্যার পেয়েছেন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category