বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
টুঙ্গিপাড়ায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের থানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত পেকুয়া শহীদ ওয়াসিমের স্মরণে স্মৃতি ফলক উন্মোচন ও বৃক্ষ রোপণ  জুড়ীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উদযাপন  ত্রিশালে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে খেলা ও পুরস্কার বিতরণ জুলাই শহিদ পরিবার,আহত ও সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিয়ে সম্মেলন ও দোয়া মাহফিল শ্রীপুরে গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিএনপির বিজয় র‍্যালীতে জনতার ঢল  ট্রাম্পকে গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে চিঠি ইসরায়েলি অবসরপ্রাপ্ত ৬শ’ কর্মকর্তার গণঅভ্যুত্থান দিবসে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করলেন প্রধান উপদেষ্টা জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জুলাই ঘোষণাপত্র: তাহেরের নেতৃত্বে অংশ নেবে জামায়াতের প্রতিনিধিদল

কোটালীপাড়ায় চোরাই ট্রলার বিক্রি নিয়ে তোলপাড়

সুধাণ্য ঘরামী, কোটালীপাড়া ( গোপালগঞ্জ)
  • Update Time : শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫
  • ২৭৪ Time View

সুধণ্য ঘরামী, কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ):

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার এক ভাঙ্গারীর দোকানে চোরাইকৃত ট্রলার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার সাথে স্থানীয় তিন বিএনপি নেতার সম্পৃক্ততার অভিযোগে তোলপাড় চলছে উপজেলা জুড়ে। কুশলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া ঠান্ডা, ১ নং ওয়ার্ডের সহসভাপতি কামরুল শেখ ও বিএনপি নেতা মহম্মদ আলী ওরফে কানা মহম্মদ ট্রলারটি পবনার পাড় গ্রামে নদীর পাড়ে উঠিয়ে কেটে কেটে টুকরো করে জিলাল সিকদার নামের এক ভাঙ্গারীর দোকানে বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এদিকে এই ঘটনার সম্পৃক্ততাসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা বিএনপি জরুরী সভা ডেকে কুশলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া ঠান্ডা ও হিরণ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নান্নু দাড়িয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। একই সাথে ট্রলার বিক্রির ঘটনায় বিএনপির কোন নেতা জড়িত আছে কিনা তার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম মহিউদ্দিন।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মেশিন দিয়ে ট্রলার কাটা ও পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়ার একাধিক ভিডিও পোষ্ট করার পর তোলপাড় শুরু হয়। ভিডিওতে উল্লেখিত বিএনপি নেতাদের ট্রলার কাটাতে ও পাশে থাকতে দেখা যায়। এরপরই ফেসবুকে একাধিক ব্যক্তি কমেন্ট ও পোষ্টে উল্লেখ করেন, এটি একটি চোরাই ট্রলার। ট্রলারটি উপজেলার কুশলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ঠান্ডা মিয়ার মধ্যস্থতায় বিক্রি করা হয়েছে।

আবদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি ফেসবুক পোষ্টে লিখেন, ‘বিএনপি কে মন থেকে ভালোবাসতাম কিন্ত কুশলা ইউনিয়ন এর সকল চুরি ডাকাতির গডফাদার সেলিম মিয়া (ঠান্ডা) গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় দলটার প্রতি জনসাধারণ এর ঘৃনা সৃষ্টি হয়। পবনারপাড় ট্রলার চুরির ঘটনায় ঠান্ডা স্পষ্টভাবে জড়িত। অবিলম্বে তার পদ থেকে অব্যাহতি চাই।’

সরেজমিনে পবনারপাড় গ্রামে গেলে একাধিক ব্যক্তি বলেন, ৮ থেকে ১০ দিন আগে কুশলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া ঠান্ডা মিয়া, ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী কামরুল শেখ ও বিএনপি নেতা মহম্মদ আলী ওরফে কানা মহম্মদ লেবার দিয়ে ট্রলারটি নদীর পাড়ে টেনে তোলেন। ষ্টীল ও লোহার তৈরী বিশাল আকৃতির এই ট্রলারটি গ্যাস মেশিন দিয়ে একটানা ৩ দিন ধরে কাটা হয়। এরপর টিহাটি গ্রামের জেলাল সিকদারের পশ্চিমপাড়ের ভাঙ্গারীর দোকানে তারা বিক্রি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, ঠান্ডা মিয়া এক সময় জননেত্রী সৈনিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। বিভিন্ন এনজিওর নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করেন। ৫ আগষ্টের পর এলাকায় এসে হয়ে যান বিএনপি নেতা। তার মামলা বাণিজ্যসহ নানা হয়রানীতে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে।

বিএনপি নেতা কামরুল শেখ বলেন, ট্রলারটি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থেকে কিনছি। অর্ধেক ট্রলার আরো ৭/৮ মাস আগে জেলাল সিকদারের ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করি। বাকি অর্ধেক ঠান্ডা মিয়ার সহযোগিতায় গত সপ্তাহে একই দোকানে বিক্রি করি। ট্রলারটি চোরাই ছিল কিনা আমার জানা নেই। তবে তিনি ট্রলার ক্রয়ের সঠিক কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।

বিএনপি নেতা সেলিম মিয়া ঠান্ডা বলেন, ট্রলারটি চোরাই কিনা আমার জানা নাই। আমার গ্রামের নদীর পাড়ে বসে ট্রলারটি কেটে বিক্রি করতে দেখছি। আমি এই কাজের সাথে জড়িত নই। আমাকে কেন কারন দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে তা আমার জানা নেই।

বিএনপি নেতা নান্নু দাড়িয়া বলেন, ট্রলার বিক্রির বিষয়ে আমার জানা নেই। কেন আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলো আমি বুঝতে পারছি না।

ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী জিলাল সিকদার বলেন,  আমি রহিম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ট্রলারের ভাঙ্গা অংশগুলো কিনেছি। এটি চোরাই ট্রলার ছিল কিনা আমরা জানা নেই।
তবে রহিমের ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর দিতে পারেননি ভঙ্গারী ব্যবসায়ী জিলাল সিকদার।

উল্লেখ্য কোটালীপাড়ায় ভাঙ্গারীর দোকানে চোরাই মালামাল বিক্রির সত্যতা ইতোপূর্বে পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এক সাংবাদিকের মন্দির চুরির মালামাল ভাঙ্গারীর দোকান থেকে উদ্ধার করে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ।

বিএনপি নেতাদের কারণ দর্শানো নোটিশ ও চোরাই ট্রলার বিক্রির বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম মহিউদ্দিন বলেন, দলীয় শৃংখলার বিষয়ে তাদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে একটি ট্রলার বিক্রির বিষয়ে কয়েকজন নেতার নামে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্তে কেউ দোষী প্রমানিত হলে তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category