মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ০২:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ট্রাম্পকে গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে চিঠি ইসরায়েলি অবসরপ্রাপ্ত ৬শ’ কর্মকর্তার গণঅভ্যুত্থান দিবসে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করলেন প্রধান উপদেষ্টা জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জুলাই ঘোষণাপত্র: তাহেরের নেতৃত্বে অংশ নেবে জামায়াতের প্রতিনিধিদল রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা বিকেলে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা ফ্লাইট এক্সপার্ট, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির প্রতারণা গাইবান্ধায় বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত কবিতা: ভয় নেই তার ” লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল শ্রীপুরে সরকারি রাস্তা কেটে জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে

বর্ণাঢ্য আয়োজনে কোটালীপাড়ায় নির্মল সেনের জন্মবার্ষিকী পালন

সুধাণ্য ঘরামী, কোটালীপাড়া ( গোপালগঞ্জ)
  • Update Time : সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫
  • ৪৭ Time View

সুধণ্য ঘরামী, কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ):

কোটালীপাড়ায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে সাংবাদিক, কলামিস্ট, বাম রাজনীতির পুরোধা, মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক নির্মল সেনের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়েছে।
আজ রবিবার (৩ আগষ্ট) সকালে কোটালীপাড়া উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা প্রয়াত নির্মল সেনের বাড়িতে গিয়ে তার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
দুপরে কোটালীপাড়া উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম বিল্লাহ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। এসময় নির্মল সেনের ভাতিজা সাংবাদিক রতন সেন কংকন, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাহান সিরাজ, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার হাওলাদার, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমান হাওলাদার, সাংবাদিক মিজানুর রহমান বুলু, মেহেদী হাসানাত, গৌরাঙ্গ লাল দাস, মাহাবুব সুলতান, মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল, রনি আহমেদ বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা নির্মল সেনের নামে রাজৈর- কোটালীপাড়া সড়কটির নামকরণ, নির্মল সেনের একটি মুর্যাাল স্থাপন, নির্মল সেনের জীবনকর্ম নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরার জন্য নানা আয়োজন এবং নির্মল সেন স্কুল ও কলেজের উন্নয়নের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রতি দাবী জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুম বিল্লাহ বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মল সেনের মুর্যাংল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। নির্মল সেনের জন্ম ও মৃত্যু দিবসসহ তার জীবনী, তার চেতনা, তার সৃজনশীলতা, তার জ্ঞান প্রজ্ঞা, তার ত্যাগ, তার বিপ্লবী চেতনাকে জাগ্রত রাখার জন্য যতো ধরনের প্রচেষ্টা প্রয়োজন হয় আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সে উদ্যোগ গ্রহনে উপজেলা প্রশাসন সচেষ্ট থাকবে। এছাড়াও রাজৈর-কোটালীপাড়া সড়কটি নির্মল সেনের নামে নামকরণ উদ্যোগ গ্রহণ এবং নির্মল সেন স্কুল এন্ড কলেজ পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে। আলোচনা সভা শেষে নির্মল সেনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটা হয়।

১৯৩০ সালের ৩ আগস্ট তিনি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামে এক সম্ভ্রন্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত। মায়ের নাম লাবণ্য প্রভা সেন গুপ্ত। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নির্মল সেন ছিলেন পঞ্চম।
নির্মল সেনের বাবা সুরেন্দ্র নাথ সেন গুপ্ত কোটালীপাড়ার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ সরকারি কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনষ্টিটিউশনের গণিত শিক্ষক ছিলেন। এর আগে সুরেন্দ্র নাথ সেন গুপ্ত ঢাকার ইস্ট বেঙ্গল ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করতেন। দেশ বিভক্তির পরে নির্মল সেনের বাবা-মা অন্য ভাই বোনদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতা চলে যান। জন্মভূমির প্রতি অকুন্ঠ ভালবাসার কারণে তিনি এদেশে থেকে যান। নির্মল সেন বড় হয়েছেন ঝালকাঠি জেলায় তার পিসির বাড়িতে।

নির্মল সেন ঝালকাঠি জেলার কলসকাঠি বিএম একাডেমি থেকে ১৯৪৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাস করেন। পিসির বাড়িতে যাওয়ার আগে নির্মল সেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জিটি স্কুলে ৪র্থ শ্রেণিতে এক বছর লেখাপড়া করেন। তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আইএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ ও মাষ্টার্স পাস করেন।

নির্মল সেনের স্কুল জীবনে ’ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। কলেজ জীবনে তিনি অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আরএসপিতে যোগ দেন। তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। এরপর তিনি দীর্ঘ দিন শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনীতি করতে গিয়ে নির্মল সেনকে জীবনের অনেকটা সময় জেলে কাটাতে হয়েছে।

১৯৬১ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার মধ্যে দিয়ে নির্মল সেন তার সাংবাদিকতার জীবন শুরু করেন। তার পর দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিষয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন।

লেখক হিসেবেও নির্মল সেনের যথেষ্ট সুনাম রযেছে। তার লেখা- পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ, মানুষ সমাজ রাস্ট্র, বার্লিন থেকে মষ্কো, মা জন্মভূমি, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই, আমার জীবনে ৭১এর যুদ্ধ, আমার জবানবন্দি- উল্লেখযোগ্য।

নির্মল সেন ২০০৩ সালে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এর পর দেশে বিদেশে অনেক চিকিৎসার পরে ২০১৩ সালে ৮ জানুয়ারি পরলোকগমন করেন। নির্মল সেনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category