রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর :
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার পল্লীতে চোর সন্দেহে জনতার গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন জামাই ও শশুর।নিহত ব্যক্তিরা হলেন তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুরের রূপলাল দাস (৪০) ও মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়াভাটা গ্রামের প্রদীপ দাস (৩৫)। সম্পর্কে তারা ভাগনি জামাই-শ্বশুর। শনিবার (৯ আগস্ট) রাতে তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা এলাকায় ঘটে এ ঘটনা।
তবে তাদের পরিবার দাবি করেছে একটি বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করতে গিয়ে এঘনার শিকার হন। এঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে মানুষ হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানান। জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেন।
নিহতদের পরিবার, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রূপলাল দাসের মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল মিঠাপুকুরের ছড়ান শ্যামপুর এলাকার লালচাদ দাসের ছেলে ডিপজল দাসের সঙ্গে। আজ রোববার (১০ আগস্ট) বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার কথা ছিল। এ জন্য মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে প্রদীপ দাস রূপলাল দাসের বাড়ির দিকে রওনা হন। কিন্তু গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা না চেনায় প্রদীপ দাস সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকায় এসে রুপলালকে ফোন করেন। সেখানে রূপলাল গিয়ে দুজনে রিকশায় চড়ে ঘনিরামপুর গ্রামের দিকে রওনা হন।
রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে ভ্যান চোর সন্দেহে তাদের দুজনকে কয়েকজন আটক করেন। এরপর সেখানে লোক জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে প্রদীপ দাসের ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে চারটি প্লাস্টিকের ছোট বোতল বের করেন লোকজন। এর একটি বোতল খুললে ভেতরে থাকা তরলের ঘ্রাণে অসুস্থ হয়ে পড়েন পাশারিপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক আলমগীর হোসেন ও বুড়িরহাটের মেহেদী হাসান। এতে লোকজনের সন্দেহ আরও বাড়ে।
এরপর অজ্ঞান করে ভ্যান চুরির সন্দেহে তাদের মারধর শুরু করেন। বটতলা থেকে মারতে মারতে বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয় তাদের। মারধরের একপর্যায়ে অচেতন হলে সেখানে ফেলে রাখা হয়। পরে রাত ১১টায় তাদের উদ্ধার করে পুলিশ তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এ সময় তারাগঞ্জ হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক রূপলাল দাসকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রদীপ দাসকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে আজ ভোররাতে তিনিও মারা যান বলেন নিশ্চিত করেছেন নিহত রূপলাল দাসের ভাই খোকন দাস।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক। তিনি বলেন, গণপিটুনিতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।এদিকে নিহতের পরিবারে শোকের মাতম দেখা দিয়েছে। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সহ জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
প্রকাশক: মোঃ আবু নাইম, সম্পাদক: তরিকুল ইসলাম , ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: নুরুজ্জামান দীপু, বার্তা সম্পাদক: ফারহান খান লাবিব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
ইমেইল: rupantorsangbad@gmail.com