রূপান্তর সংবাদ ডেস্ক:
টানা তিনদিনের ভারী বৃষ্টি এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া রংপুর, কুড়িগ্রাম নীলফামারী ও গাইবান্ধা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী ও নোহালী; আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া ও পলাশী; সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নীচু অঞ্চল রয়েছে । এদিকে লালমনিরহাটের চরাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট ও আমন ধানের খেত, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বহু পরিবার। অনেকে গবাদি পশু ও মালপত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন।
বুধবার সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি যেভাবে হু হু করে বাড়ছে তাতে যেকোনো সময় বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের মানুষজন। এদিকে তিস্তার পানির চাপ সামাল দিতে দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তিস্তার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা জানিয়েছেন—টানা কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে তিস্তার চরাঞ্চলের নিম্নঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।ডুবে গেছে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে চাষাবাদকৃত ফসলের ক্ষেত। তিস্তায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
তিস্তা ব্যারেজ কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ নুরুল ইসলাম জানান—টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে বুধবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করে ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।পানির চাপ সামাল দিতে ব্যারেজের ৪৪ গেট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তাপাড়ের গোবর্ধন মনছের আলী বলেন—বুধবার ভোর থেকে ভারতের উজান থেকে পানি হু হু করে আসছে বাংলাদেশের দিকে। এতে ডুবে যাচ্ছে চরাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, পানিবন্দি হচ্ছে মানুষ। আকাশের পানি আর ভারতের পানি একাকার হয়ে গেছে। তিস্তা সংলগ্ন গড্ডিমারী এলাকার কৃষক জয়নাল আবেদিন জানান—নীচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাট। পশুপাখি, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি পরিবারগুলো।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন—বৃষ্টি ও ভারতের উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, বুধবার সকাল ৬টায় পানি বিপদসীমা পেরিয়ে ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপ সামাল দিতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খোলা রাখা হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও রাস্তাগুলো পর্যবেক্ষণ করছি।
Leave a Reply